নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে চলছে পর্যটনের ভরা মৌসুম। বিগত বছরগুলোতে ঈদ-উল-আযহার পরে পর্যটনস্পটগুলোতে পা ফেলার স্থান জুটতো না। কিন্তু এ বছর পুরোপুরি উল্টাে চিত্র। করোনার আঘাতে পর্যুদস্ত বরিশাল বিভাগের পর্যটন খাত। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচমাস পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময় ভ্রমণপিয়াসুদের সমাগমে মুখর থাকতো কুয়াকাটা, আটঘর-কুড়িয়ানা, দুর্গাসাগর, শুভসন্ধ্যা সি-বিচ, মনপুরার মতো চিত্তাকার্ষক প্রাকৃতিক জনপদগুলো। মৌসুমের এই পাঁচমাসে বিভাগের বিভিন্ন স্পটে দিনে কমপক্ষে দশ সহস্রাধিক পর্যটক আসতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। পর্যটন সাংবাদিক আরিফ রহমান মনে করেন, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনস্পটে মৌসুমে কম করে হলেও পনেরো লাখের বেশি মানুষ অবসর কাটাতে আসতেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসতো। অথচ এবার স্থানীয় মানুষ ছাড়া পর্যটকদের দেখা মিলছে না দর্শনীয় স্থাপনায়। মূলত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসছেন না। তাই ধস নেমেছে পর্যটন খাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর এ সময়টাতে কুয়ায়াটা, আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানের মতো বড় বড় পর্যটন স্পটগুলোতে ছিল প্রচুর লোকসমাগম। যা এবছর পুরোই শূন্য। পর্যটক না থাকার ফলে বন্ধ রয়েছে হোটেল-মোটেল খাবার রেস্টুরেন্টগুলো। এছাড়া বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, দুর্গাসাগর, গুঠিয়া মসজিদ, বরগুনার শুভসন্ধ্যা চর, মনপুরাসহ বিভিন্ন স্পটে বিগত বছরগুলোর চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা তেমন একটা বেশি ছিল না। যে দুই একজন পরিবার অথবা প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে তাদের সবাই স্থানীয়। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদের কুমার দাস জানান, করোনা ভাইরাসে বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১১৯ জনের। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৪৬। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩ হাজার ৭১২ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৮৯৭।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ জানান, করোনা ভাইরাসের ফলে পর্যটন খাতে কয়েক কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে অর্নিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল পর্যটনস্পট। ১ জুলাই সকল স্পট খুলে দেওয়া হলেও পর্যটক আসছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের হোটেল-মোটেলগুলোতে পরিচ্ছন্নভাবে সাজিয়ে তুলেছি। আশা করছি, পর্যটকরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসবেন।’ নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকায় আমরা এখনও পর্যটকদের জন্য ট্রলারের মাধ্যমে পেয়ারা বাগানে ভ্রমণের অনুমতি দিচ্ছি না। করোনা প্রতিরোধে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কাজ করে যাচ্ছেন।’
আটঘর-কুড়িয়ানার একাধিক ট্রলারচালক বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। পর্যটকদের ভ্রমণে বাগানে কোনো ট্রলার চলাচলের অনুমতি নেই। আমাদের সারা বছরের সবচেয়ে বড় রোজগারের পথটি বন্ধ। তবে আড়ত থেকে বিভিন্ন উপজেলায় পেয়ারা পৌছে দিয়ে আপাতত সংসার চলছে।’ বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাসরেক বাবলু জানান, টার্মিনালে এক হাজার ৫০০ জনের মতো শ্রমিক আছেন। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এখন বিধি-নিষেধ শিথিল হলেও ঈদে যাত্রীদের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পর্যটক না থাকায় বাসশ্রমিকদের দুর্দিন কাটছেই না।’
Leave a Reply